Recent Posts

banner image

মহেঞ্জোদারো? বিশ্ববিখ্যাত এক প্রাচিন সভ্যতা। এর ইতিহাস সম্পর্কে জানুন

মহেঞ্জোদারো সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত 


 এটা পৃথিবির প্রাচিন একটি শহর। ৪৬০০ বছর পুরনো। এটা প্রায় আজকের মতই আধুনিক শহর ছিল। এখানকার মানুষরা আমাদের মতই জীবনযাপন করতো। তাদেরও ছিলো ইটের বাড়ি, শান বাধানো পুকুর, পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা। তবে বর্তমানে এটা একটা ধবংসস্তুপ। এটা লিপিবদ্ধ হয়েছে ইতিহাসের পাতায়। এটা হচ্ছে মহেঞ্জোদার! মহেঞ্জোদারো শহর। এই পোস্টে আপনি জানতে পারবেন মহেঞ্জোদারো সম্পর্কে। তো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

 মহেঞ্জোদারো হরপ্পো সভ্যতার প্রধান শহর ছিলো। এটা বর্তমানে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত। প্রায় ১০০ বছর আগে ৪৬০০ বছরের পুরনো এই শহরের সন্ধান পাওয়া যায়। মহেঞ্জোদারো শব্দের অর্থ মৃতের স্তুপ। হরপ্পা সভ্যতা সম্পর্কে মানুষ খুব কমই জানে। কিন্তু যতটুকু জানে তা খুবই বিস্ময়কর। তো চলুন এরকম কিছু বিস্ময়কর বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

 আবিষ্কার 


 ১৮৫৬ সালে একজন ইংরেজ ইঞ্জিনিয়ার এই অঞ্চলে রেললাইনের কাজ করছিলেন কাজ করার সময় মাটির তলায় অনেক পুরনো ইট পায় যেগুলো দেখতে আজকের ইটের মত। যখন একজন স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানা গেল যে এখানকার সব বাড়ি এই ইটের তৈরী যা মাটি খুরে পাওয়া যায়। তখন ওই ইংরেজ বুঝে যায় এটা কোন সাধারণ ইট নয়। এই জায়গায় লুকিয়ে আছে কোন এক প্রাচীন সভ্যতা। সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা সম্পর্কে তিনিই প্রথম জানতে পারেন। ১৯২২ সালে রাখালদাস বঙ্গপাধ্যায় মহেঞ্জোদারো পুনরায় আবিষ্কার করেন। তারপর ১৯৩৩ খৃস্টাব্দে স্যার জন মার্সালের নেতৃত্বে ব্যাপক খননকার্য চলে।

 উন্নত জীবন শৈলি 


 মহেঞ্জোদারোতে বসবাসকারি মানুষদের থাকার পদ্ধতি আমাদের সবচেয়ে বেশি অবাক করে দেয়। মহেঞ্জোদারো তখনকার সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকেও বেশি বিকশিত এবং উন্নত ছিলো। এই শহর ৬০০ একর জমির উপর বিস্তৃত ছিল যেটা তখনকার সময়ে বেশ বড় আকারের । এখানকার ধবংস্তুপ থেকে জানা যায় এই শহরে প্রবেশের জন্য সামনে একটি বড় দরজা ছিলো। এখানে এমন কয়েকটি বাড়ির নিদর্শন পাওয়া গেছে যা তিনতলা পর্যন্ত উচু ছিলো। এখানকার দালানকোঠা বানানোর জন্য যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা কোন সাধারণ ইট ছিলো না এটা ওয়াটার প্রুফ ইট ছিলো। মনে করা হয় পৃথিবিতে প্রথম পাতকুয়া স্থাপন করেছিলো হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা। এখানে ৭০০ এরও বেশি পাতকুয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। 

নগরীর রাস্তাঘাট


 সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত মহেঞ্জোদারো পৃথিবির সবচেয়ে পুরনো পরিকপ্লিত শহর। এখানকার রাস্তাগুলো এলোপাতারি তৈরি হয়নি। প্রত্যেকটি রাস্তা নির্দিষ্ট ধারায় তৈরি। এ থেকে ধারণা করা হয় মহেঞ্জোদারোবাসিদের গণিতশাস্ত্রে তুলনামূলক জ্ঞান ছিলো। 

পয়ঃপ্রনালী


 মহেঞ্জোদারো কোন সামান্য শহর ছিলো না। এই শহরে বড় বড় বাড়ি, পাকা রাস্তা এবং কুয়া থাকার প্রমান মিলেছে। এটা জেনে আপনি আরো অবাক হবেন যে এখানকার ময়লা পানি বের হওয়ার জন্য পুরো শহরে ড্রেন ছিলো যা সেসময় বেশ অকল্পনীয়। এখানকার মানুষেরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এতটাই সজাগ ছিলো যা এখনকার অনেকের মাঝেই নেই। এখানকার বাড়িতে বাথরুম এবং টয়লেট থাকার প্রমান মিলেছে। মহা স্নানাগার মহেঞ্জোদারোর আরেকটি আকর্ষণীয় স্থাপনা হচ্ছে মহাস্নানাগার। গ্রেট বাথ নামে এই স্থাপনাটি নগরের কেন্দ্রেই ছিলো। গবেষকদের ধারনা ধর্মীয় পরিসুদ্ধির জন্য এখানে স্নান করতে আসতেন পূন্যার্থিরা। পুলের পানি যাতে কোনদিক দিয়ে বেড়িয়ে না যায় সেদিকে অধিবাসীরা কড়া নজর রাখতো। 

শষ্যভান্ডার


 এখানকার মানুষেরা চাষাবাদ করতো। খাদ্যশষ্য মজুদ করে রাখার জন্য সেখানে ছিলো বিশেষ ব্যবস্থা। শষ্যের আদান প্রদানের সুবিধার জন্য উন্নত রাস্তা ছিলো স্থাপত্যের পাশে। এমনকি খাদ্যশষ্য যাতে অনেকদিন ভালো থাকে এজন্য ভান্ডারে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখত।

 চিকিৎসা


 এখানকার খননকার্য শেষ করার পর এখানে পাওয়া কংকালগুলো ল্যাবে পরিক্ষা করা হয়। পরিক্ষা করার পর কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। ওই সময়কার মানুষেরা আজকের দিনের মতই নকল দাত ব্যবহার করত। এ থেকে বোঝা যায় তারা আসলেই চিকিৎসাশাস্ত্রে উন্নত ছিলো।

 শিল্প সংস্কৃতি


 মহেঞ্জোদারো বাসিন্দারাও শিল্পসংস্কৃতিতে আধুনিক ছিলো বলে অনেক গবেষক মনে করেন। শিল্পকলায় এই সভ্যতার অনেক আগ্রহ ছিলো এই নজির এখানে পাওয়া গেছে। এখানে অনেক পোড়ামাটির নিদর্শনও পাওয়া গেছে। অধিবাসীরা গলার হার, কানের দুল, ব্রেসলেট জাতীয় জিনিস, গহনা ইত্যাদি ব্যবহার করত এর নিদর্শনও পাওয়া গেছে। পুরাতত্তবিদদের অনেকের ধারণা এই সভ্যতার গান বাজনা খেলাধুলা ইত্যাদির প্রতি বেশ আগ্রহ ছিলো। তারা এসবের চর্চা করত। গবেষকরা এখানে অনেক বাদ্যযন্ত্র এবং খেলনা পেয়েছেন। এছাড়াও অনেক চিত্রকল, মূর্তি, বিভিন্ন আকারের পাত্র এবং অনেক সাংসারিক জিনিসপত্র পেয়েছেন। এসবকিছু এখন দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় সংগ্রহিত আছে।

 নগরীর পতন


 হঠাৎ করেই এই নগরীর পতন ঘটেছিল বলে মনে করেন গবেষকরা।

কিন্তু কেন? কিভাবে? কেমন করে? কোন সময়? কি কারনে?

 মহেঞ্জদারো ধবংস হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে কারো জানা নেই। তবে অনেকের ধারণা হঠাৎ ভূমিকম্পের কারনে এই শহরের পতন হয়েছিল। আবার অনেকে মনে করেন সিন্ধু নদের হঠাৎ গতিপথ পরিবর্তনের জন্য এখানে পানিসল্পতা দেখা দেয় যা একসময় মহামারীর আকার ধারন করে এর জন্য এই শহর ছেড়ে সবাই চলে যায়। আবার অনেকেই মনে করেন আবহাওয়া বিপর্যয়ের জন্য মুলত এই শহরের পতন। ঠিক কি কারনে মহেঞ্জোদারো পতন ঘটেছিলো তা ঠিক জানা যায়নি।

 তো বন্ধুরা কেমন লাগলো মহেঞ্জোদারো সম্পর্কে জেনে? অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন সাথে কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন।

 পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ                                                                   
মহেঞ্জোদারো? বিশ্ববিখ্যাত এক প্রাচিন সভ্যতা। এর ইতিহাস সম্পর্কে জানুন মহেঞ্জোদারো?  বিশ্ববিখ্যাত এক প্রাচিন সভ্যতা।  এর ইতিহাস সম্পর্কে জানুন Reviewed by Adsız on Ocak 28, 2019 Rating: 5

Hiç yorum yok:

Blogger tarafından desteklenmektedir.