অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম। নিজে গান গেয়ে, সে গান রেকর্ড করে ইউটিউবে দেব। অনেকেই এখন গান রেকর্ড করে ফেসবুকে ইউটিউবে দিয়ে বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছে। আমারও শখ হলো বিখ্যাত হওয়ার ভাইরাল হওয়ার। যদিও আমি গানের ‘গ’-ও জানি না এবং আমার গলায় সুরের ‘স’-ও নেই। তাতে কী? চেষ্টা করে দেখতে তো আর দোষের কিছু নেই। কথায় আছে, কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। নো কষ্ট, নো কেষ্ট।
অনেক বাছবিচার করে পুরোনো দিনের একটি বাংলা গান নির্বাচন করলাম। গানটি হলো ‘আর কত রাত একা থাকব, আর কত রাত একা থাকব। চোখ মেলে দেখব না তোমাকে....।’ রাতদিন এই গান সিডিতে শুনি আর সঙ্গে সঙ্গে গাই। উদ্দেশ্য একই গান বারবার শুনে ও গেয়ে সুরটাকে পোক্ত করে ফেলা। তবে সমস্যা হলো, আমার এই একই গান সারা দিন-রাত শোনার কারণে বউ প্রচণ্ড বিরক্ত। তার ধারণা আমাকে ভীমরতিতে ধরেছে। আমার বউ মনে করে আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে অকর্মা ব্যক্তি। তার বিশ্বাস অকর্মণ্য ব্যক্তি হিসেবে আমার নাম অবশ্যই গিনেজ বুকে থাকা উচিত ছিল। তবে বউয়ের সমর্থন না পেলেও আমার এই গান চর্চার একজন সঙ্গী পেয়েছি। সে হচ্ছে আমার ছেলে। ওর বয়স মাত্র তিন বছর। সেও আমার সঙ্গে সঙ্গে গান গায়। যদিও তার উচ্চারণে কিছুটা সমস্যা। তবু আমরা একসঙ্গে গান গাই এবং গান শেষে আমরা একে অপরকে তালি দিয়ে উৎসাহ দিই।
এখন রাত বারোটা। বউ রান্নাঘরে কাজ করছে আর ছেলে বেড রুমে ঘুমোচ্ছে। আমি ড্রয়িংরুমে বসে সিডিতে গান বাজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গলা মিলিয়ে সুরটা ঝালিয়ে নিচ্ছি। মনে হচ্ছে সুরটা প্রায় আয়ত্তে চলে এসেছে। ভাবছি বিসমিল্লাহ বলে কালই গান রেকর্ড করে ফেলব। তারপর ফেসবুক, ইউটিউবে পোস্ট। এরপর ভাইরাল, বিখ্যাত, হইচই। বিষয়টা ভাবতেই মনের মধ্যে এক অজানা সুখবোধ হতে লাগল। কিন্তু কপালে এই সুখ-চিন্তা বেশিক্ষণ সইল না। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে বউ এসে সিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে দিল। তারপর সামনে এসে কোমরে হাত রেখে দাঁড়াল। সে সাধারণত প্রচণ্ড রেগে গেলে দুই হাত কোমরে রেখে দাঁড়ায়। এটা তার ঝগড়া শুরু করার লক্ষণ। তবে এখন সে দুই হাত নয়, এক হাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ তার অন্য হাতে একটি ধারালো বটি উঁচু করে ধরা।
চোখমুখ খিঁচে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার সমস্যা কি?
: কোনো সমস্যা নাই। আমি খুবই কুল আছি। শান্ত গলায় উত্তর দিলাম।
: তোর কুলের গুষ্টি কিলাই। এই ব্যাটা তুই সারা দিন এই এক গান শুনোছ ক্যান? দুনিয়ায় আর কোনো গান নাই? তুই কি রাতে একলা থাকস? তুই কি একলা? আমি আছি, তোর ছেলে আছে, তারপরও তুই একলা? ব্যাটা লুইচ্চা। আর একবার যদি তুই এই গান বাজাইছোস। মনে রাখিস, তোরে বটি দিয়া মাত্র একটা কোপ দিব। তারপর আমি সাদা শাড়ি পরে গায়ে আতর লাগিয়ে বিধবা হয়ে যাব।
: আচ্ছা বিধবারা সাদা শাড়ি পরে জানতাম। কিন্তু আতরও লাগায় নাকি? তা তো জানতাম না। আসলে খোদার দুনিয়ায় এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে।
: অন্য কেউ লাগায় কিনা আমি জানি না। তবে আমি আতর লাগাব। তোর কোনো সমস্যা আছে?
: কোনো সমস্যা নাই। ইচ্ছে হলে অবশ্যই লাগাবে। শখ বলে কথা। কিন্তু বাসায় কি আতর আছে? আর তোমার কি সাদা শাড়ি আছে? শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
: তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করোস?
: আরে না, ফাজলামি কেন করব। সাদা শাড়ি, আতর আছে কিনা জিজ্ঞেস করছি। আমি মারা গেলে তোমাকে এগুলো কে কিনে দেবে? আমার একটা দায়িত্ব আছে না? ঠিক আছে কাল অফিস থেকে আসার সময় সাদা শাড়ি আর আতর কিনে আনব। এটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো তুমি রেগে গেলেই আমাকে তুই করে বলো। এতে মনে কষ্ট পাই। শোনো স্বামীকে তুই করে বলা ঠিক না।
: ঠিক আছে আর তুই বলছি না। কিন্তু এই গান বন্ধ করো। রাত নাই, দিন নাই একই গান শুনতে শুনতে আমার মাথা কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। ছেলেটা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
: গান শুনে ছেলে নষ্ট হচ্ছে! বলো কি? তিন বছরের ছেলে নষ্ট হয় কীভাবে?
: নষ্ট হচ্ছে না, হয়ে গেছে। বেডরুমে গিয়ে দেখো।
: ওতো ঘুমোচ্ছে।
: ঘুমোচ্ছে! আসো আমার সঙ্গে।
বলেই আমার হাত ধরে টেনে বেডরুমে নিয়ে গেল। বেডরুমে গিয়ে দেখি ছেলে আমার ডায়পার পরে খালি গায়ে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে সুর করে গান গাইছে। এক লাইনই বারবার গাইছে। তবে কিছু শব্দ হারিয়ে গেছে এবং কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে গাইছে—‘আর কত ব্যাকা তাকাব, আর কত ব্যাকা তাকাব।’
: ওই দেখ তোর পোলা নাকি আর ব্যাকা থাকবে না। সে এখন সোজা হতে চায়। যা এখন পোলারে বিয়া করাই দে। বাপ যেমন খারাপ পোলাও তেমনই হচ্ছে। আজ থেকে বাসায় গান বন্ধ। না হলে মনে রাখিস এই বটি কিন্তু তোর গলায়...।
বলে হনহন করে বেডরুম থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে ছেলে মায়ের চিৎকারে গান বন্ধ করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ছেলেকে বললাম, বাবারে একা-ব্যাকা থাকো সেটাই ভালো। সোজা হওয়ার চেষ্টা করিস না। সোজা হওয়ার অনেক ঝামেলা।
: বাবা ঝালেমা কি?
: কিছু না। তুই ঘুমা।
: বাবা ঘুম নাই। আচো গান গাই।
: গান গাইবি? কিন্তু তোর মা যদি, আচ্ছা আয় গাই।
বাবা-ছেলে আবার গান ধরলাম। এবার আমিও ছেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছেলের স্টাইলে গাইলাম, আর কত রাত ব্যাকা তাকাব, আর কত রাত ব্যাকা তাকাব...।
: ওই তোরা থামবি, না আমি বটি নিয়ে আসব। রান্নাঘর থেকে বউয়ের চিৎকার শুনে বাপ ব্যাটা দুজন চুপ করে গেলাম।
অবশেষে বউয়ের হুমকির কারণে গান প্রকল্প বাদ। কিন্তু মাথা থেকে বিখ্যাত হওয়ার ভূতটা গেল না। যে করেই হোক আমাকে বিখ্যাত হতেই হবে। ঠিক করলাম কবিতা লিখে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেব। কয়েকটি কবিতা লিখে বিভিন্ন গ্রুপে পাঠালাম। কিন্তু কেউই ছাপাল না। অ্যাডমিনকে তেল দিয়ে ইনবক্সে মেসেজ পাঠাতে থাকলাম। কোনো লাভ হলো না। বারবার তৈলাক্ত মেসেজে বিরক্ত হয়ে একদিন অ্যাডমিনই আমাকে মেসেজ পাঠালেন।
—ভাই আপনের আল্লাহর দোহাই লাগে, আমারে আর এই সব মেসেজ পাঠাইয়েন না। আপনে তো পাম দিয়া আমারে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল বানায়ে দিলেন। শোনেন আপনি আমারে সাহিত্যে নোবেল দিয়া দিলেও আপনার কবিতা আমি ছাপাব না। আর আপনি যদি এইভাবে নিয়মিত আমারে বিরক্ত করেন, তাহলে আপনাকে গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হবে। কবিতা লেখা বাদ দেন। এটা সম্ভবত আপনাকে দিয়ে হবে না। সবাই সব কাজ পারে না। ভালো থাকবেন।
মেসেজ পড়ে হতাশ হলাম। কিন্তু আমি দমে যাওয়ার পাত্র না। তাই এখন নিজের কবিতা নিজের পেজে পোস্ট করা শুরু করেছি। গতকাল রাতেও একটা কবিতা পোস্ট করেছি। মারাত্মক কবিতা হয়েছে। আশা করছি পাবলিকে লাইক কমেন্টের বন্যা বইয়ে দেবে।
একটু আগে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি। হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখি বউ বসে আছে। টেবিলের ওপর একটা বটি আর এক গামলা পান্তা ভাত। বুঝলাম অবস্থা সুবিধার নয়।
ভয়ে ভয়ে মিষ্টি করে বললাম, আমার সোনাপাখি কেমন আছ?
: মেয়েটা কে? সরাসরি প্রশ্ন করল।
: আচ্ছা আগের কালের রাজা বাদশাহরা যেমন সব সময় কোমরে একটা তলোয়ার নিয়ে ঘুরত। তুমিও দেখি সব সময় হাতে একটা বটি নিয়ে ঘোরো। তোমার সমস্যাটা কি? আমি তো এখন আর গান গাই না।
: আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি মেয়েটা কে?
: কোন মেয়েটা?
: ন্যাকামি করবে না? তুমি কাল ফেসবুকে একটি কবিতা লিখেছ না?
: হ্যাঁ লিখেছি।
: কবিতার নাম কি?
: তোমার লাল টিপে হারিয়েছে মন।
: হারামজাদা ঠিক করে বল, কার টিপে তোর মন হারাইছে? আমি তো টিপ পরি না। কার সাথে আবার ইটিস পিটিস শুরু করছোস?
: লা হাউলা অলা কুয়াতা ইল্লা বিল্লা। বিশ্বাস করো আমার চরিত্র এত খারাপ না। আমি তোমারে নিয়ে এই কবিতা লিখেছি।
: ওই তুই কি আমারে বলদ মনে করোছ? আমারে কখন তুই টিপ পরতে দেখলি?
: বিশ্বাস করো আমি কল্পনায় তোমাকে টিপ পরিয়ে কবিতাটি লিখেছি। আমার কবিতার কসম।
: সত্যি তো?
: একশত ভাগ সত্যি।
: আচ্ছা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু এটা কি লিখেছো? এটাকে কবিতা বলে? এত ফালতু কবিতা একজন মানুষ কীভাবে লিখতে পারে এটা আমার মাথায় আসে না। আমার মান সম্মান সব গেছে।
: বলো কী! কবিতা লিখলাম আমি, আর মানসম্মান গেল তোমার! কীভাবে? তাতো বুঝলাম না।
: তা বুঝবে কীভাবে। ওর জন্য তো ঘিলু দরকার। সেটা তো আবার তোমার নাই। মাথা ভর্তি তো শুধু পান্তা ভাত। তোমার কবিতা পড়ে আমার বান্ধবী শিলা আমারে একটা মেসেজ দিছে?
: কি মেসেজ? নিশ্চয় বলেছে অসাধারণ।
: না লিখছে, দুলাভাইরে পাবনা পাঠা। গাড়ি ভাড়া আমার।
: এত বড় কথা। তুমি তারে কিছু বলোনি?
: অবশ্যই বলেছি।
: ভেরি গুড। এই না হলে আমার বউ। তা কি বলেছো?
: বলেছি, তোর কষ্ট করে টাকা দিতে হবে না। আমি ওকে ওর টাকায় পাবনা পাঠাব।
: তুমিও আমারে অপমান করছো? কেন লেখা ভালো হয় নাই?
: এটা কবিতা! তুমি এটা কি লিখছো? তোমার ওই লাল টিপে হারিয়েছে মন,/ ইচ্ছে হয় ওই টিপকে প্লেট বানিয়ে,/ তাতে পান্তা খাই মরিচ পুড়িয়ে।/ তোমার কাছে টিপ প্লেটের মতো লাগে?
: আরে ওটা তো উপমা।
: এটা উপমা! এত ফালতু উপমা তুমি ছাড়া আর কারও পক্ষে লেখা সম্ভব না। আর একটা কথা, তোমার এত খিদে ক্যান? কবিতার মধ্যও তোমার খেতে হবে। তাও আবার পান্তা ভাত! তোমার পান্তা খাবার খুব শখ তাই না? তাই তোমার জন্য আজ পান্তা রেডি করেছি। এই যে এক গামলা পান্তা, আর পোড়া মরিচ। এই সব পান্তা এখন তুমি খাবা।
: বলো কি? এত পান্তা আমি খাব কীভাবে? আর আমি তো পান্তা ভাত খাই না। শুধু মাত্র কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য লিখেছি।
: এটা বললে তো এখন হবে না। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে তিনবেলাই তোমারে পান্তা খাওয়াব। মানুষ সকালে বেড টি খায়, তোমারে আমি বেড পান্তা খাওয়াব।
: শোনো এত অত্যাচার করো না। তার চেয়ে এক কাজ করি। এডিট করে পান্তার বদলে খিচুড়ি লিখে দিই, কি বলো?
: শালা খ্যাত। পান্তা, খিচুড়ি ছাড়া আর কিছু চিনোস না? পিৎজা, বার্গার তোর চোখে পড়ে না?
: এগুলো তো বিদেশি খাবার। এগুলো দিলে কবিতাটা ফুটবে না? আচ্ছা এক কাজ করি পান্তাভাত মুছে হালিম লিখে দিই। এটা শাহি খাবার।
: না থাক, আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। এখন থেকে আপনার কবিতা লেখাই বন্ধ।
: তুমি আমার গান বন্ধ করছো, এখন আবার কবিতা লেখা বন্ধ করতেছো। এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
: আচ্ছা তোমার গান গাওয়া বা কবিতা লেখার কি দরকার? তা তো আমার মাথায় ঢোকে না।
: আমার বিখ্যাত হতে হবে। আমার ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়াতে হবে। আমি কল্পনায় দেখি একসময় আমার লাখ লাখ ফলোয়ার হবে।
: তাই! তোমার এখন ফলোয়ার কত?
: চৌদ্দজন।
: কি বললা? মাত্র চৌদ্দজন? পাঁচ বছর আগে অ্যাকাউন্ট খুলছো, আর ফলোয়ার মাত্র চৌদ্দজন।। আমি অ্যাকাউন্ট খুলেছি এ বছর। আমার ফলোয়ার কত শুনবা? আমার ফলোয়ার একুশ হাজার।
: তা তো হবেই। মেয়েদের ফলোয়ার এমনিতেই বেশি হয়। ছেলেরা সুন্দর মেয়ে দেখলেই ফলো করতে শুরু করে। সে রাস্তায় হোক আর ফেসবুকে হোক। আমি তো আর মানুষকে রূপে ভুলাব না। আমি আমার গুণে ভুলাব।
: শোনো মন খারাপ করো না, একটা সত্য কথা বলি। তোমার রূপ গুণ কোনোটাই নাই। তুমি যেই মানের গায়ক এবং যে মানের কবি তোমার ফলোয়ার সংখ্যা চৌদ্দ থেকে শূন্য হতে সময় লাগবে না।
: আচ্ছা তুমি কি আমারে অপমান করছ?
: না অপমান করছি না। তোমাকে বাস্তবতা বোঝাচ্ছি। সবাই সবকিছু পারে না। যে কাজ তুমি পার না সেটা করতে যাও কেন? এতে মানুষ তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। তার চেয়ে যেটা ভালো পার সেটাই করো।
: তোমার হিসেবে তো আমি কিছুই পারি না। তুমি কি বলতে পার আমি কি ভালো পারি।
: অবশ্যই বলতে পারি। তুমি অনেক ভালো ভালোবাসতে পার। সেটাই করো। আমাকে ভালোবাসো তোমার ছেলেকে ভালোবাসো। তোমাকে আর কিছু করতে হবে না। আমরাই তোমার ফলোয়ার। প্রয়োজনের সময় ফেসবুকের ফলোয়ার কাউকেই পাবে না। কিন্তু আমাদের সব সময় পাবে।
: তোমরা আমার ফলোয়ার! ভেরি গুড তাহলে আমার ফলোয়ার এখন চৌদ্দ না ষোলো।
: তোমার ভাইরাল হওয়ার ভূত এখনো যায়নি, না? বলেই বউ হাসতে লাগল।
বউয়ের হাসির শব্দে ছেলে পাশের ঘর থেকে এসে বলল, বাবা তোমরা হাচো কেন?
: আমরা হাসাহাসি খেলছি বাবা।
: বাবা আচো না গান গাই।
: গান গাবা?
ভয়ে ভয়ে বউয়ের দিকে তাকালাম। দেখলাম সেখানে প্রশ্রয়ের হাসি। আমি আর ছেলে মিলে গান ধরলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম বউও আমাদের সঙ্গে গান ধরেছে। তিনজনে মিলে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে গান গাইলাম।
‘আর কত রাত ব্যাকা থাকব, আর কত রাত ব্যাকা থাকব।’
আচ্ছা জীবনটা এত সুন্দর কেন?
বি. দ্রষ্টব্য:
বউকে বলিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কবিতা বা গান না। এবার একটা নাচের ভিডিও করব। অবশ্য আমি নাচতে জানি না। তবে এটা কোনো সমস্যা না। পৃথিবীতে যিনি প্রথম নাচ আবিষ্কার করেছেন, তিনিও নাচতে জানতেন না। নাচের গানও মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছি। গানটি হলো—
চাকভুম চাকভুম। উুঁ। চাঁদনি রাতে কিছু বলব তোমায় চোখের ভাষায়...।’
নাচের কোরিওগ্রাফার আমি নিজেই। নাচের পোশাক ঠিক করেছি লুঙ্গি। আর মাথায় গামছা বাঁধা থাকবে। এই গানের সঙ্গে নাচ প্র্যাকটিস চলছে। এখানেও আমার সঙ্গী আমার ছেলে। বউ এখন বাসায় নেই। তাই আমরা প্র্যাকটিস করছি। কোরিওগ্রাফি সেট করেছি চাকভুম চাকভুমের সময় দৌড়ে আসতে হবে এবং উুঁ আসা মাত্রই দুই হাতে লুঙ্গিটা একটু ধরে লাফ দিতে হবে। অনেকটা যাত্রার নাচের মতো। ছেলেকে একটা গামছা লুঙ্গির মতো করে পরিয়ে দিয়েছি। সে খুব সহজেই নাচটা আয়ত্ত করে ফেলেছে। গামছা পরে সুন্দর করে কিউট লাফও দিচ্ছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। তবে এর মধ্যে অন্য একটা সমস্যা হয়ে গেছে। ওই লাফ দিতে গিয়েই আমার পা মচকে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথা। এখন রিহার্সাল বন্ধ। পায়ে গরম ছ্যাক নিচ্ছি। ইনশা আল্লাহ ব্যথা একটু কমলে আবার শুরু করব।
...
ইমদাদ বাবু: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
বউ বনাম ভাইরাল - মজার কমেডি গল্প
Reviewed by Adsız
on
Ocak 25, 2019
Rating:
Hiç yorum yok: